২০০১-২০২৫ SSC ও HSC ফলাফল পরিসংখ্যান: GPA ৫-এর উত্থান-পতন ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বাস্তবতা

পিয়নমামা ডটকম এর পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুটি একটু ভিন্নতর—এটি শিক্ষা সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানভিত্তিক পোস্ট।

আমাদের অনেক ভিজিটর আছেন, যারা এক দশক আগে, কেউবা দুই দশক আগেও এসএসসি পাশ করেছেন। অনেকে আবার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসএসসি বা এইচএসসি শেষ করেছেন। সকলের মনে প্রায়ই একটি প্রশ্ন ঘোরে—এসএসসি বা এইচএসসি গ্রেডিং পদ্ধতির সূচনা কবে থেকে? অথবা কেমন ছিল পাসের হার এবং জিপিএ ৫ পাওয়ার পরিসংখ্যান?

চলুন জেনে নিই ২০০১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান

গ্রেডিং পদ্ধতির শুরু ও এসএসসি ফলাফল পর্যালোচনা (২০০১–২০২৫)

২০০১ সাল থেকে এসএসসিতে গ্রেডিং পদ্ধতির সূচনা হয়। সে সময় পাসের হার ছিল মাত্র ৩৫.২২%, এবং জিপিএ ৫ পায় মাত্র ৭৬ জন। ধাপে ধাপে এই হার বাড়তে থাকে।

sc-hsc-gpa5-trend-vs-admission-failure

বছরভিত্তিক জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা (SSC)

বছর GPA 5 প্রাপ্ত শিক্ষার্থী পাসের হার (%)
20017635.22%
2002327
20031,389
20048,597
200515,649
200624,384
200725,732
200841,917
200945,934
201052,134
201162,244
201282,212
201391,122
20141,42,276
20151,11,901
20161,09,761
20171,04,761
20181,10,629
20191,05,594
20201,35,898
20211,83,340
20222,69,602
20231,83,578
এইচএসসি ফলাফলের চিত্র (২০০৩–২০২৪)

এইচএসসিতে গ্রেডিং পদ্ধতির সূচনা ঘটে ২০০৩ সালে। সেবার ৫ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২০ জন পেয়েছিল জিপিএ ৫, আর পাসের হার ছিল ৩৮.৪৩%

পরবর্তী বছরগুলোতে জিপিএ ৫ ও পাসের হার বাড়তে থাকে:

সাল জিপিএ ৫ প্রাপ্ত
২০০৩২০
২০০৪৬,৮০২
২০০৫১০,৮৩৫
২০০৬১৫,৭০২
২০০৭২০,০৯৬
২০০৮২২,২৮২
২০০৯২৬,৬০১
২০১০৩৯,৭৬৯
২০১১৩৯,৮৬৮
২০১২৬১,১৬২
২০১৩৫৮,১৯৭
২০১৪৬৮,২৬০
২০১৫৫৮,২৭৬
২০১৬৫৮,২৭৬
২০১৭৩৭,৭২৬
২০১৮২৯,২৬২
২০১৯৪৭,২৮৬
২০২০১,৬১,১০৭
২০২১১,৮৯,১৬৯
২০২২১,৭৬,২৮২
২০২৩৯২,০০০
২০২৪১,৪৫,৯১১

📌 দ্রষ্টব্য: অন্যান্য বছরের পরিসংখ্যান পোস্টের মধ্যে বিস্তারিতভাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

হঠাৎ ফলাফলের পতন কেন?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিপিএ ৫-এর সংখ্যায় বড় ধরনের ভাটা লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এর প্রধান কারণ:

  • শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্ত শিক্ষা বোর্ডের কড়া মূল্যায়ন নীতি

  • পরীক্ষকদের বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীর উত্তর অনুযায়ী নম্বর দিতে হবে—উদার নম্বরের সুযোগ নেই

  • অতীতে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার চাপ থাকলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ করা হয়েছে

শিক্ষকদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী:

“যেভাবে লিখবে, সেভাবেই নম্বর পাবে।”

ভর্তি পরীক্ষায় GPA 5-এর বিপরীত চিত্র

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৯৪% শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এমনকি কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটেও ৯০% এর বেশি ফেল
এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েও প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি!

কারণ কী?

বিগত ১৫ বছরে পরীক্ষকদের "সহানুভূতির" ভিত্তিতে নম্বর দিতে বলা হয়েছে। এমনকি নম্বর কম দিলে শাস্তির হুমকিও দেওয়া হতো।
একাধিক শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকের মতে:

  • ৩০ পেলে ৪০,

  • ৪০ পেলে ৫০,

  • ৫০ পেলে ৬০,

  • ৬০ পেলে ৭০

  • এবং ৭০ পেলে ৮০ করা হতো!

এই অলিখিত নিয়মে শিক্ষার মান নষ্ট হয়েছে, যা ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থতার কারণ হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে। 

❓ প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

প্রশ্ন: জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বাড়ার কারণ কী?
উত্তর: পূর্ববর্তী সরকারের সময় নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে উদারতা, সহানুভূতির মূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক চাপে ওভারমার্কিংই প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ে পাসের হার এত কম কেন?
উত্তর: শিক্ষার্থীরা এসএসসি-এইচএসসিতে প্রয়োজনীয় মান অর্জন না করেও উচ্চ নম্বর পেয়েছে, কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় প্রকৃত মূল্যায়নে অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন।

প্রশ্ন: ভবিষ্যতের জন্য কী করণীয়?
উত্তর: শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, জবাবদিহিতা, ক্লাসে পড়ানোর নিশ্চয়তা এবং শিক্ষার গুণগত মানে জোর দিতে হবে।

 উপসংহার

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গত দুই দশকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পাসের হার এবং জিপিএ ৫-এর উল্লম্ফন যেখানে একদিকে অর্জন মনে হয়েছিল, অন্যদিকে ভর্তি পরীক্ষার ব্যর্থতা তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এখন সময় এসেছে—সংখ্যার চেয়ে মানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার।
নতুন প্রজন্মের জন্য সত্যিকারের মানসম্মত শিক্ষা সংবাদ নিশ্চিত করাই হতে পারে পিয়নমামা ডটকম-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর অঙ্গীকার।

🟩 এই পোস্ট যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে শেয়ার করুন ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে। নিয়মিত পড়তে ভিজিট করুন: www.peonmama.com

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org