উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পর্কে আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা ও তিক্ততা
আসসালামু আলাইকুম। পিয়নমামা ডটকম ব্লগের পক্ষ হতে সুপ্রিয় শিক্ষার্থী ও ভিজিটর বন্ধুদের সবাইকে শুভেচ্ছা। পিয়নমামা ডট কম সাইটে পড়াশোনা বিষয়ক আমি বেশ কয়েকটি পোস্ট করেছিলাম বিশেষত যারা ওপেনের শিক্ষার্থী তাদের সুবিধার্থে। ওয়েবসাইট ও সোস্যাল সাইটসহ আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন ভাই! আপনিতো বিভিন্ন পোস্টে উল্লেখ করেছিলেন যে, বাউবিতে পড়াশোনার সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা রয়েছে। তাছাড়া আপনি যেহেতু এখানে কোন একটি কোর্সে পড়াশোনা করেছিলেন সেহেতু তিক্ততারও অভিজ্ঞতা রয়েছে।
জ্বী ভাই! একদম ঠিক বলেছেন! বিগত পোস্টেও আমি এই সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলাম। আপনাদের অনেকের অনুরোধে আজ এই বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতাসহ আমার শিক্ষা বায়োগ্রাফি শেয়ার করছি। আশা করি মনোযোগের সাথে এই পোস্টটি পড়বেন ও শেয়ার করবেন।
শিক্ষার প্রতি আন্তরিকতা ও আমার নব সূচনা:
আপনাদের অনেকের মতই একজন আমিও একজন সাধারন মানুষ। ৩য় শ্রেনি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ছেড়ে দিয়েছিলাম। আসলে সেই সময়ে পড়াশোনার প্রতি আমার তেমন আগ্রহ ছিলনা, তাছাড়া মেধাবুদ্ধিরও বেশ ঘাটতি ছিলো। যা পড়তাম তাই ভূলে যেতাম। বলা চলে এই সময়ে পড়াশোনা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আর পড়াশোনা ছেড়ে দিলে কি হয় তা ভূক্তভোগীগণও ভাল করে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। দীর্ঘদিন ধরেই নিজের আত্নীয় স্বজন, সমাজ আর শিক্ষিত বন্ধুদের টিপ্পনী শুনেই দিন অতিবাহিত হতে লাগলো। একেতো নিষ্কর্মা, অপরদিকে লেখাপড়া করলাম না এই অভাবটা আমাকে নিপিড়িত করতে লাগলো। অবশেষে নিজের বাড়ী (যশোর এলাকা) ছেড়ে রাজশাহীতে পাড়ি দিলাম। এখানে মেসে অবস্থান করলাম। এরমধ্য একটি কাজ জুটিয়ে নিলাম। এইভাবে রাজশাহীতে ০২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায়। দীর্ঘ সময়ে সেখানকার অনেক বিশিষ্টজনদের সাথে পরিচয় ঘটে যেমন: সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, স্কুল কলেজের শিক্ষক হতে শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, অনেক শিক্ষার্থী ভাইয়েদের সান্নিধ্যে পাইলাম যেখানে আমাকে শান্তনা, লেখাপড়ার প্রতি মটিভেশন দিতে লাগলো। তাছাড়া এই সময়ে সোস্যাল সাইটে বিভিন্ন লেখক, বুদ্ধিজীবিসহ সফল মানুষদের মটিভেশন শুনে আমার পড়াশোনার প্রতি স্পৃহা ও আগ্রহ, জেদ বেড়ে গেল। ফলে উপলদ্ধি হল যে, শিক্ষা ছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্র কার্যদেহী অচল। প্রকৃত ও বিবেকবান মানুষ হতে হলে আমাকে পূনরায় পড়াশোনা করতে হবেই। সুতরাং মনের জেদ চেপে রেখে বাউবিতে ২০১১ সালের শেষের দিকে রাজশাহীতে ভর্তি হই (অবশ্য কিছুটা বয়স কম করে)।

এস.এস.সি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া, ফলাফলঃ
যেহেতু কাজকর্ম করি বলে তখন জেনারেলে ভর্তির সুযোগ ছিল না।। তখন বেশ কয়েকটি স্কুলেও গিয়েছিলাম। স্কুল থেকে বলা হয়েছিলো ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই জেএসসি পাশ হতে হবে, শিক্ষাবোর্ডের নোটিশ অনুযায়ী ৮ম শ্রেনি পাশের সনদ দিয়ে আর ৯ম শ্রেনিতে ভর্তি নেওয়া হবেনা। আর যদি কোন রকমে নেওয়া হয় তাহলে রেগুলার ক্লাশ করতে হবে। ঐ সময়ে রাজশাহী লোকনাথ স্কুলে গিয়েছিলাম। আমার আগ্রহ দেখে সেখানের গনিতের শিক্ষক শ্রদ্ধেয় বাশার স্যার আমাকে উন্মুক্তের অধীনে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেন ও তিনিই ব্যবস্থা করে দিলেন লোকনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে। ব্যস! প্রতি শুক্রবারে মাসে হলেও ২ দিন ক্লাস করতাম। আমাদের সাথে ভর্তি হয়েছিলো প্রায় ১৩০ জন মত শিক্ষার্থী। এইভাবে ০২ বছর কেটে গেল। ২০১১ সালে ভর্তি হয়েছিলাম ০২ বছরের কোর্সের সমন্বিত পরীক্ষা দিতে হলো ২০১৪ সালে, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। অথচ সনদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৩ সাল। এটার কারনেই আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কোন কলেজে অনার্স ভর্তির আবেদন করতে পারি নাই। কারন, তখন বাউবির সিস্টেম ছিলো অনেক হযবরল, সেশনজট দেখানো হতো, পরীক্ষা নিতো অন্য সালে এবং ফলাফল প্রকাশ করতো আরেক সালে।
তখন বাউবি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনার কারনে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন নষ্ট হয়েছিলো। বর্তমানে অবশ্য সেই সমস্যা এখন নাই, তারপরেও কিন্তু বাউবি জেনারেল বোর্ডের মত আপডেটেড হতে পারে নাই, তবুও সমস্যা রয়ে গেছে। তাছাড়া বাউবিতে যখন ভর্তি হয়েছিলাম জেনারেলের মত ক্লাশ উপভোগ করতে ভালো লাগত না, কারন জেনারেল কিংবা অন্য কোন বোর্ডের শিক্ষার্থীদের এত আন্তরিকতা দেখানো হয় না এবং জেনারেলের মত বাধ্যবাধকতা না থাকার কারনে ক্লাশ সবাই করতো না বলে কেউ কাউকে তেমন একটা চিনত না। এর ফলে ওপেন শিক্ষার্থীদের বন্ধুত্বের ঘাটতে থাকে। যেমন: আমি ওপেন হতে এসএসসি কোর্স করেছি, কিন্তু আমার সাথে কে বা কারা পড়েছে তা এখনো বলতে পারবো না, তেমন একটা স্মরন নাই। শুধুমাত্র পরীক্ষা দেওয়ার সময় বছরে একবারই দেখেছি। আসলে এই রকম তিক্ততার বিষয় নিয়ে বিগত একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম।
এইচ.এস.সি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া, ফলাফলঃ
এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে আমি বাউবি অপেক্ষা অনেক এনার্জী ফিল করে ছিলাম বিশেষত জেনারেলদের মত প্রায়ই ক্লাশ করা লাগতো, ব্যবহারিকসহ অন্যান্য পরীক্ষা দিতে হতো। ফলে স্যার ও বন্ধুদের সাথে বেশ একটা সৌহাদ্যপূর্ণতা গড়ে উঠলো যা অত্র প্রতিষ্ঠান হতে পাশ করে গেলেও বর্তমানেও বিরাজমান রয়েছে। পরিশেষে ২০১৭ সালে চুড়ান্ত পরীক্ষাতে অংশ গ্রহন করি এবং জিপিএ ৪.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। আমার আশা ছিলো হয়ত কেটেকুটে এ গ্রেড ৪.০ পয়েন্ট পাবো কিন্তু তার থেকেও বেশি পেয়ে আমার মনের কনফিডেন্স অনেক বেড়ে গেল।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ব্যাচের আমিই আমার প্রতিষ্ঠান হতে সর্বোচ্চ জিপিএ পাই। অবশ্য বিগত বছর গুলোর ব্যাচ আরো অনেক মেধাবী ছিলো, সেই সময় অনেকেই এ+ পেয়েছিলো। আরেকটি বিষয় আমার এই প্রতিষ্ঠান হতে পাশ করে বিগত সময়ে অনেকেই রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সেরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলো এবং এখনো সেই কৃতিত্বের ধারা চলমান আছে।
অনার্স (স্নাতক) সম্মান প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার তিক্ততা ও অভিজ্ঞতার কাহন:
আমি যখন এইচএসসি পর্যায়ে অধ্যয়নরত তখন হতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কোন রকমে পাস করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোন একটি কলেজে ভর্তি হবো বিশেষত সরকারি কলেজে। আসলে আমি স্থির করে নিয়েছিলাম কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিবোনা ও ভর্তিও হবোনা যদি সুযোগও হয় তবুও। অবশ্য এখানে কতগুলো কারন ছিলো যথারুপ: পূর্বেই ব্যাখ্যা করেছি যেহেতু কাজকর্ম করি সুতরাং কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চান্স পেলেও পড়তে পারবো না, রেগুলার ক্লাশও করতে পারবো না। অপরদিকে আমার ছোট বোন সেবার জেনারেল বোর্ড হতে এইচএসসিতে এ+ পাই, সুতরাং তাকে নিয়েও যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিতে যেতে হবে। এই জীবনে অনেককেই দেখলাম যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়েও বেকার শব্দটি বহন করছে, তাছাড়া এমন কাউকেও দেখেছি নামে মাত্র মাত্র কোন একটি কলেজ হতে ডিগ্রি পাশ করে সে ২/৩ টি সরকারি চাকুরির সুযোগ পেয়েছে। তারপরেও যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন নিসন্দেহে তারা অনেক প্রতিভাবান ও মেধাবী শিক্ষার্থী। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের অনেককেই এখনো সমীহ করে চলি। অবশেষে বুঝতে পারলাম কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই প্রার্থীকে চাকুরির নিশ্চয়তা দেয়না। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকই স্কীল গড়ে নিতে হয়। তারপরেও ভাগ্য ও আল্লাহ্ তায়ালার মেহেরবানী থাকতে হয়। ব্যক্তিগত ভাবে যতটুকু জানি ও পৃথিবীর কোন সংবিধানে লেখা নেই যে, লেখাপড়া করা মানেই চাকুরি। যাইহোক সময় পেলে পরবর্তীতে এই বিষয় নিয়ে আমার পোস্ট করার ইচ্ছা আছে। এবার মূল আলোচনাতে আছি।
সেই সময়ে (২০১৮ সাল) আমার ছোট বোনকে সাথে নিয়ে ঢাবি, জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভর্তি পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলাম। আমার নিজের থেকে বেশি চিন্তা ছিল ছোট বোনকে নিয়ে কারন আমারতো অনেক বয়স হয়েছে, ক্যারিয়ার তো আগেই শেষ করে দিছি। ছোট বোনের তো সামনে অনেক ভবিষৎ দেখতে পাচ্ছি, তাছাড়াও সে লেখাপড়াতেও যথেষ্ট মনোযোগী ও মেধাবী ছাত্রী। আমার ছোট বোনের পিএসসি হতে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত সকল পরীক্ষাতে এ+ প্রাপ্ত। তাছাড়া সে যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলো সব কয়টিতেই উত্তীর্ণ হয়। অবশেষে সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই। আলহামদুলিল্লাহ্ অবশেষে সে এই বছর (২০২২) দর্শন বিভাগ হতে ফাস্ট ক্লাশ ফাস্ট সিজিপিএ ৩.৩৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
যেহেতু পূর্বেই বলেছি আমি জাতীয়র অধীনে পড়াশোনা করবো তাই নিশ্চিন্তে ছিলাম যে কোন একটি কলেজে চান্স হবে। তাছাড়া জাতীয়র অধীনে তো ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া লাগেনা! তাই এত চিন্তার কারন নাই। পরিশেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কুলার দেখে আমার তো মাথায় বাজ পড়া মত অবস্থা সেখানের শর্তাবলী দেওয়া হয়েছে এসএসসি ২০১৪ কিংবা ২০১৫ সাল হতে হবে। অথচ আমার এসএসসির সনদে লিখা ২০১৩, ফলাফল প্রকাশের তারিখ ২০১৫। আর এই বিষয়ে আমার মত শিক্ষার্থীদের এমন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার একমাত্র নাটের গুরু হলো উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং যা হবার তাই হলো। অবশ্য এই বিষয় নিয়ে আমি সরাসরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে ডিনের সাথে আমি সাক্ষাৎ করার কোন সুযোগ পাই নাই মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের অসৌজন্যমূলক আচরনের কারনে।

সত্যিই তাদের আচার ব্যবহার সৌজন্যতার অনেক ঘাটতি আছে। তো এই অবস্থাতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ডিগ্রিতে ভর্তি হবো যা হবার তা হয়েছে, কপালে আল্লাহ্ তায়ালা হয়ত এটাই আমার জন্য লিখে রেখেছিলেন। অবশ্য তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রির আবেদনের সুযোগ পেয়েছিলাম এবং করেও ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত আমার উপর বর্ষিত হওয়ায় ডিগ্রিতে আর ভর্তি হওয়া লাগেনি। কেন ভর্তি হয়নি সেই গল্পটা নিচের পয়েন্টে বলছি।
ঢাবি অধিভূক্ত কলেজে আবেদন, ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি প্রক্রিয়া
অতপর সেই বছর ২০১৭ সালের শেষের দিকে এসে রাজধানীর সরকারি ০৭ টি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অধীনে অন্তভূক্ত করে এবং পরবর্তীতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়। অতপর আমি দেখলাম অনার্স টিকানোর জন্য এটাই আমার সর্বশেষ সুযোগ। তাই আমিও প্রস্তুতি নেবার জন্য সকল কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে জয়কলির একটি গাইড কিনে নিয়ে প্রতিদিন ৬-৭ ঘন্টা করে স্টাডি করতে লাগলাম এবং অভিজ্ঞ ভঅইদের পরামর্শ নিতে লাগলাম। তাছাড়া ঐ সময়ে আমার ছোট বোনকে ইউসিসি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছিলাম। সুতরাং তার হ্যান্ডনোটগুলোও কাজে লাগালাম। অধিভূক্ত ০৭ কলেজের সার্কুলার দিলে আমিও পড়লাম পূনরায় মহা বিপদে। তার কারন হলো ঐ নাটের গুরু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং ঢাবির নোটিশ যারা উন্মুক্ত হতে পড়েছে তাদেরকে ১০০০/- টাকার বিনিময়ে ঢাবিতে এসে সমতা নিরুপন করে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিয়ে আবেদন করতে হবে।

দৃষ্টি আকর্ষণ: এখানে একটি কথা বলে রাখি। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে যারা সত্যিকারের বড় মনের মানুষ/বিদ্বান তাদের মনে তেমন অহংকার বা কথার টং থাকেনা। তেমন ঢাবিতে গিয়ে এই প্রমাণটা পেলাম। প্রথমত বিজনেস ফ্যাকাল্টির অফিসে গেলাম, সালাম প্রদান করলাম এবং আমার সমস্যার কথা ব্যক্ত করলাম। স্যারেরা আমাকে বসতে দিলেন। বললাম স্যার কাজকর্ম করি, এই বুড়া বয়সে পড়াশোনা করার ইচ্ছা আসে, সমতা নিরুপনের জন্য এসেছি। তখন পাশ থেকে ০২ জন স্যার বললেন, আরে বাবা লেখাপড়ার মূলত প্রকৃত বিদ্যা অর্জনের কোন বয়স নাই। হয়ত তোমার বয়স যদি ৩০ এর কম থাকে তাহলে সরকারি চাকুরির সুযোগ পাবা। আর চাকুরি করাটাই যে তোমার মুখ্য বিষয় হতে হবে তাতো নই। ঠিক তুমি তোমার প্রয়োজনীয় কাগজ গুলো দাও আমরা সমতা নিরুপন করে দেখছি মিনিট ৩০ এর মত লাগবে। ঠিক আছে তুমি এখানে বসো, ফ্যানের বাতাসে বিশ্রাম নাও! চা খাবে! কথা বলার ফাঁকে তারা এও বললেন, এখানে ভর্তিতে সুযোগ পাওয়ার পর ভাল করে পড়াশোনা করবে, বিসিএস দেওয়ার সামর্থ থাকলে দিবে। তোমরাই তো আগামী দিনের ভবিষৎ। সত্যিই তাদের এই সৌজন্যমূলক বার্তা ও অনুপ্রেরণাতে মনটা আমার অনেক প্রশস্ত হলো। কিছুক্ষণ পর আমাকে জানানো হলো আপনি বাসায় চলে যান নিশ্চিন্ত মনে, ০২ দিনের ভিতর আপনাকে ফোন করে আপনাকে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রেরন করা হবে। এখানে সিস্টেম ইউনিটে যে ম্যাডাম কাজ করেন তিনি আজ আসেননি। অবশেষে রিয়েলি ০২ দিন পর ঢাবি অফিস থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিলো। অবশেষে আবেদন করি এবং ভর্তি পরীক্ষাতে অংশগ্রহন করি।

ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার প্রায় ০১ সপ্তাহ পর ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফলাফলে আমার মেরিট পজিশন আসে ৯৮৩ তম। অতপর সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু কাজকর্ম করি, লেখাপড়াতে তেমন একটা সময় দিতে পারব না সেহেতু যাতে প্যারা না হয় এমন একটা বিষয় নিবো। পরিশেষে কলেজ নির্বাচনের সময় ঢাকা কলেজ রেখে বাকি কলেজগুলোতে ১ম বিষয় ইসলামের ইতিহাস দিলাম। অবশেষে ঢাকা কলেজ নির্বাচিত করা হলো আমাকে। কিন্তু খবর নিয়ে দেখলাম যে, ঢাকা কলেজে নিয়মিত ক্লাশ ও ত্বত্তাবধানে থাকতে হবে বিধায় ডিন অফিসে গিয়ে আমি ১০০০/- জরিমানা দিয়ে অবশেষে বাঙলা কলেজ নির্বাচন করি ও ভর্তি হই।
অনার্স পাঠের পরিসমাপ্তি:
আলহামদুলিল্লাহ! দীর্ঘ ০৪ বছর সংগ্রামের পর অবশেষে স্নাতক পরীক্ষাতে সিজিপিএ ২.৮৮ পেয়ে কৃতকার্য হই। অবশ্য করনাকালীন সময়ে সেশনজটে পড়তে হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে আমার ক্যাম্পাসের সহপাঠীদের ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলীর আন্তরিক সহযোগীতা পেয়েছি। ক্যাম্পাসে নিয়মিত ক্লাশ না করতে পারলেও সঠিক সময়ে প্রতিটি ইনকোর্স, মিডটার্ম ও নির্বাচনী পরীক্ষাতে অংশ গ্রহন করেছিলাম। এই বছরের শেষের দিকে মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হবে। নিচে অনার্স প্রোগ্রামের কিছু চিত্র সংযোজন করা হলো:
ক) প্রবেশপত্র:

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
এমনিতেই ভাই বুড়িয়ে গেছি। সরকারি চাকুরীতে বয়সও আমার তেমন হাতে থাকবেনা। আসলে সরকারি চাকুরির উদ্দেশ্য আমি লেখাপড়া করিনি। লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিলো জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতা যাচাই। তাছাড়া বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে শিক্ষার দিক হতে অন্তভূক্ত হতে স্নাতক ডিগ্রিধারী হিসেবে নাম লিখানো। কর্ম হিসেবে এমনিতেই হকারি করি। ইচ্ছা আছে উচ্চতর গবেষণা বিষয়ক পড়াশোনা করার, সমাজের নিপেষিত মানুষদের জন্য কিছু করা (আল্লাহ যদি সুযোগ দেন) এবং উদ্যোক্তা হওয়া। আপনারা সবাই দূআ রাখবেন।
আপনাদের জন্য পরামর্শ ও কিছু কথা:
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, আপনি সংকল্পবদ্ধ হন। কোন সময় হতাশ হবেন না। আশা রাখুন অন্যরা পারলে আপনিও পারবেন। আপনি যে প্রতিষ্ঠান হতে পড়াশোনা করেন না আপনাকে দক্ষতা ও ক্রিয়েটিভ হতে হবে। উদাহরনঃ মনে করি আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করে কোন চাকুরীর রিটেন পরীক্ষাতে ফেল করলেন, বাট আরেকজন ওপেন হতে পাশ করলেন। তখন নিয়োগদাতা অবশ্যই সিউর হবেন যে তিনি অনেক মেধাবী ও জানেন। সুতরাং শুধু কপি কিংবা গাটছড়া পড়লেই হবে না। জানার চেষ্টা করতে হবে। এই যেমনঃ নিজের ব্যক্তিগত কথাই বলি আমি যখন অনার্স হতে যাই তখন ঢাবির স্যারেরা, আমাকে বলতে লাগলো তুমি অনেক মেধাবী, কারন, ওপেন হতে এখানে ১০০০ এ- বোধ হয় ৫ জন আসে। ওপেন হতে সরকারি চাকুরী করা যাবে বাট বয়স অবশ্যই ৩০ এর মধ্যে থাকতে হবে।
এর বেশী হলে কোন সুযোগ নাই। তবে ওপেনে অধিকাংশই বেশী বয়সী কিংবা ছেদপড়া শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। বেসরকারির বিষয় আলাদা।পড়াশোনার পাশাপাশি স্কীল গ্রহন করতে থাকুন যেমনঃ কম্পিউটার, ড্রাইভিং, ইংরাজী বা অন্য কিছু। আমি আজকে এই পোস্ট লিখলাম শুধুমাত্র আপনাদের অনুপ্রেরণা/উৎসাহ দেওয়ার জন্য। আমি আবারও বলছি আমি যে খুব বিশাল মানের ব্যক্তি, খুবই বিদ্বান লোক তা কিন্তু নই। আমি অতি একজন সাধারন, নগন্য। আসলে এখানে শুধু আমি নই, আমার মত অনেকেরই এই রকম আত্ন জীবনী রয়েছে। আপনারা অনেকেই সোস্যাল সাইট ব্যবহার করেন সেখানে দেখবেন বর্তমান সময়ের অনেক সফল ব্যক্তি তরুনদের আত্ন জীবনি রয়েছে। যেমন: আমি অনেক পূর্ব থেকেই গাজী মিজানুর রহমান স্যার (বিসিএস ক্যাডার, লেখক: অথেনটিক পাবলিকেশন্স), সুশান্ত পাল ( ৩৪ তম বিসেএস ক্যাডার, পররাষ্ট্রে ১ম) স্যার সহ অনেক মোটিভেশনাল লেখকদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনতাম। ফলে এখনে একটা বাড়তি অনুপ্রেরনা যোগ হয়।
সর্বশেষ:
একদম পোস্টের আলোচনার শেষ পর্যায়ে। আমি তুচ্ছ লোক হয়ে যদি সামান্যতম পথও এগোতে পারি। তাহলে ইনশাআল্লাহ্ আপনারা লেগে থাকলে ও মনে জেদ থাকলেও আপনিও অনেক সফলতার পথ পাবেন। তবে ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি জীবনে সফল হতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। অবসর সময়ে ভালো কিছু বই পড়তে হবে,মোটিভেশনাল ব্যক্তিদের কথাগুলো অনুসরন করতে হবে সৎ থাকার চেষ্টা করতে হবে, সর্বদা আল্লাহ তায়ালার নাম অন্তরে রাখতে হবে ও সাহায্য চাইতে হবে, অসৎ বন্ধু/সঙ্গ পরিত্যাগ করতে হবে, অবসর সময়ে ভালে কিছু বই পড়তে হবে কিংবা মোটিভেশনাল ব্যক্তিদের কথাগুলো অনুসরন করতে হবে এবং সময় পেলে ভ্রমন করতে হবে। পরিশেষে এই প্রবন্ধটি ধৈয্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে আবারো ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমার এই লেখাটুকু কারোর উপকারে আসলে একটু হলেও নিজেকে ধন্য মনে করবো। পরিশেষে সবার সুস্থতা কামনা করছি এবং কোন মতবাদ থাকলে নিচে কমেন্ট পাবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
উল্লেখ্য আমাদের ব্লগ সাইট ভিজিট করতে ব্রাউজারের সার্চবার কিংবা গুগলে গিয়ে পিয়নমামা ডটকম কিংবা Peon Mama লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। আরেকটি বিষয়, পিয়নমামা ডটকম সাইটে শুধু লেখাপড়া বিষয়ক নই পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে চাকরির বিজ্ঞপ্তি, কম্পিউটার টিপস, অনলাইনে ইনকামের কৌশল, ফ্রিল্যান্স, ক্যারিয়ার আড্ডা, সফটওয়্যার রিভিউ ও ই-কমার্স নিয়ে পোস্ট পাবলিশ করা হবে।