জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন-ক্যাম্পাস অনার্স ভর্তি ২০২৫: কোর্স, যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া
পিয়নমামা ডটকম পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মনে একটি সাধারণ প্রশ্ন উঠে— জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে যেখানে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে, সেখানে আবার “অন-ক্যাম্পাস অনার্স ভর্তি” বিষয়টি কেন এসেছে?
আসলে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে সরাসরি ভর্তি হওয়ার সুযোগটি তুলনামূলকভাবে নতুন এবং অনেকটাই আলাদা। ২০২৩ সাল থেকে এই বিশেষ ভর্তিপদ্ধতি চালু হয়েছে, যেখানে সীমিত আসনের ভিত্তিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরাসরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অনার্স প্রোগ্রামে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য এই অন-ক্যাম্পাস অনার্স ভর্তিতে আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীদের কিছু নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে, যা পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে।
এই পোস্টে আমরা অন-ক্যাম্পাস অনার্স ভর্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যোগ্যতা, আবেদন পদ্ধতি, ভর্তি সময়সূচি এবং অন্যান্য দরকারি দিকগুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। আশা করি, আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন এবং উপকৃত হবেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (On Campus) অনার্স ভর্তি টাইম লাইন : |
---|
|
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন-ক্যাম্পাস ও অধিভুক্ত কলেজ: মূল পার্থক্য এক নজরে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স প্রোগ্রাম দুটি ধরণের হয় — অন-ক্যাম্পাস এবং অধিভুক্ত কলেজ। নিচে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
🏫 অবস্থান ও পরিবেশ
-
অন-ক্যাম্পাস: মূল ক্যাম্পাসে সরাসরি ক্লাস হয়; পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ও উন্নত।
-
অধিভুক্ত কলেজ: স্থানীয়ভাবে পরিচালিত কলেজ; পরিবেশ কলেজভেদে ভিন্ন হতে পারে।
📚 একাডেমিক কাঠামো
-
অন-ক্যাম্পাস: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে; নির্ধারিত সিলেবাস কঠোরভাবে মানা হয়।
-
অধিভুক্ত কলেজ: NU-এর নির্দেশনায় চলে, তবে কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় স্বতন্ত্রতা থাকতে পারে।
📝 পরীক্ষা ও সনদ
-
অন-ক্যাম্পাস: সময়মতো পরীক্ষা ও দ্রুত রেজাল্ট প্রকাশ।
-
অধিভুক্ত কলেজ: রুটিন মোতাবেক পরীক্ষা হয়, তবে মাঝে মাঝে বিলম্ব হতে পারে।
🎓 সুযোগ-সুবিধা
-
অন-ক্যাম্পাস: উন্নত লাইব্রেরি, ল্যাব, মানসম্পন্ন শিক্ষক।
-
অধিভুক্ত কলেজ: সুযোগ-সুবিধা কলেজভেদে কম-বেশি হয়।
✅ গ্রহণযোগ্যতা
-
অন-ক্যাম্পাস: অন-ক্যাম্পাস অনার্স ডিগ্রি অনেক ক্ষেত্রেই চাকরি ও উচ্চশিক্ষার জন্য বেশি গ্রহণযোগ্য। কারণ এটি সরাসরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে পরিচালিত প্রোগ্রাম। তাছাড়াও এটা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমমানের মত সনদের পরিচয় বহন করবে।
-
অধিভুক্ত কলেজ: অধিভুক্ত কলেজের ডিগ্রিও জাতীয়ভাবে স্বীকৃত। তবে কলেজটির মান ও পরিচিতির উপর ভিত্তি করে ডিগ্রির মূল্যায়ন কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
অনার্স (On Campus) ভর্তির নূন্যতম যোগ্যতা: |
---|
|
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন-ক্যাম্পাস কোর্স ও আসন বণ্টন (২০২৫)
বিঃদ্রঃ আসন সংখ্যা সময় ও নীতিমালা অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।
📘 কোর্সের নাম | প্রক্রিয়া | মোট আসন | বিজ্ঞান | মানবিক | ব্যবসায় |
---|---|---|---|---|---|
এলএলবি (LLB) | সকল গ্রুপ | ৪০টি | ২০% (৮টি) | ৬০% (২৪টি) | ২০% (৮টি) |
বিবিএ (BBA) | প্রক্রিয়ার জন্য | ৪০টি | ১০% (৪টি) | ২০% (৮টি) | ৭০% (২৮টি) |
ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি | প্রক্রিয়ার জন্য | ৪০টি | ২০% (৮টি) | ৬০% (২৪টি) | ২০% (৮টি) |
নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স | বিজ্ঞান গ্রুপ | ৪০টি | ১০০% (৪০টি) | — | — |
মোট | — | ১৬০টি | ৬০টি | ৫৬টি | ৪৪টি |
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি ও সিলেবাস:
সিলেবাস
- বিজ্ঞান বিভাগের জন্যঃ বাংলা-২০, ইংরেজি-২০, সাধারণ জ্ঞান-১০, পদার্থ বিজ্ঞান-১৭, রসায়ন-১৭, গণিত/জীববিজ্ঞান-১৬।
- মানবিক বিভাগের জন্যঃ বাংলা-২৫, ইংরেজি-২৫, সাধারণ জ্ঞান-১০, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পঠিত বিষয়ের মধ্যে যে কোন চারটি বিষয়-৪০।
- ব্যবসায় বিভাগের জন্যঃ বাংলা-২৫, ইংরেজি-২৫, সাধারণ জ্ঞান-১০, হিসাববিজ্ঞান-২০, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ-২০।
পরীক্ষা পদ্ধতি
- MCQ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার মোট নম্বর ১০০, পাশ ৩৫। নেগেটিভ মার্ক নেই।
- এসএসসি জিপিএ এর ৪০% + এইচএসসি জিপিএ এর ৬০% = ১০০, মোট নম্বর ২০০।
- কলেজে আবেদন করে ২০০ মার্কের মধ্যে যার মার্ক বেশি সে আগে চান্স পাবে। এইভাবে সিট বরাদ্দ হবে। চান্স পাওয়ার পর সাবজেক্ট পছন্দ না হলে রিলিজ স্লিপে ৫টি কলেজে আবেদন করতে পারবেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাসে ভর্তির আবেদন পদ্ধতি:
- কিভাবে আবেদন করতে হবে, তার নির্দেশিকা পিডিএফ ফাইলটি ওপেন করুন ও পড়ুন এখানে
- সর্বপ্রথম প্রার্থীকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট http://app1.nu.edu.bd/ তে প্রবেশ করতে হবে ।
- নিচের মত উইন্ডো আসবে। সেখানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পাশের সাল, বোর্ড, রেজিঃ নম্বর ও রোল নম্বর ইনপুট করে ধাপে ধাপে কাজগুলো শেষ করতে হবে।
অনার্স ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র কিভাবে ডাউনলোড করবেন?
ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কমপক্ষে ৭ দিন আগে, পরীক্ষার প্রবেশপত্র (Admit Card) সংগ্রহ করতে হবে।বিশেষ করে পরীক্ষার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করে নোটিশ দেখে নেওয়া ভালো।
অনার্স ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোন গাইড বই পড়বেন?
যদি আপনি আগে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা ৭ কলেজ ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করে থাকেন, তাহলে নতুন করে আলাদা গাইড বই কেনার দরকার নেই। সেই কোচিংয়ের স্যারের লেকচার, লেকচার শিট কিংবা আগের গাইডগুলোই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট কাজে লাগবে।
কারণ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র সাধারণত খুব একটা কঠিন হয় না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে ৮০% প্রশ্ন কঠিন হয়ে থাকে, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রায় ৭০% সহজ ও সাধারণ মানের হয়ে থাকে। তবে যদি আপনি আগে কোনো প্রস্তুতি না নিয়ে থাকেন কিংবা কোচিং না করে থাকেন, তাহলে একটি ভালো মানের ভর্তি গাইড কিনে প্রস্তুতি শুরু করাই সবচেয়ে ভালো।
বইয়ের দোকানগুলোতে আপনি পাবেন বিভিন্ন নামকরা প্রকাশনীর গাইড যেমন:
- লেকচার
- ব্যতিক্রম
- জয়কলি
- দিকদর্শন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য নিচের কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবে:
- অনলাইনে পূরণ করা আবেদন ফর্ম – ২ কপি
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি – ৪টি (ছবির পেছনে নাম লিখে দিন; তবে কলেজ ভেদে সংখ্যার তারতম্য হতে পারে)
- SSC/সমমান পরীক্ষার নম্বরপত্র (মার্কশিট) – মূল কপি ও ২টি ফটোকপি
- HSC/সমমান পরীক্ষার নম্বরপত্র (মার্কশিট) – মূল কপি ও ২টি ফটোকপি
- SSC রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ফটোকপি – ২ কপি
- HSC রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ফটোকপি – ২ কপি
- HSC প্রশংসাপত্র (Character Certificate) – মূল কপি ও ২টি ফটোকপি
- শিক্ষাবিরতি সনদ – কেবল ২০২৩ সালে HSC পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য
- কোটার সনদপত্র – যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বা পোষ্য কোটায় আবেদন করেছেন, তাদের জন্য প্রযোজ্য
অনার্স ভর্তি ও ৪ বছরে মোট খরচ কত?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে (গাজীপুর) অনার্স কোর্সে ভর্তি হতে প্রাথমিকভাবে ৪,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
যদি কোনো বেসরকারি কলেজে ভর্তি হন, তাহলে ভর্তি ফি হিসেবে ৭,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হতে পারে—কলেজভেদে এই অঙ্কটা ভিন্ন হতে পারে।
চার বছরের পুরো অনার্স কোর্স শেষে শিক্ষাব্যয় মিলিয়ে মোট খরচ দাঁড়ায় আনুমানিক:
-
মূল ক্যাম্পাসে: সর্বনিম্ন ২০,০০০ টাকা, সর্বোচ্চ ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
-
এই ব্যয় অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে আবাসিক সুবিধা (হল বা ছাত্রাবাস) নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
উপসংহার
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অন-ক্যাম্পাস অনার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া এখন মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ। সীমিত আসনে ভর্তি হলেও এখানে শিক্ষার মান, পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এবং গ্রহণযোগ্যতা অন্য যেকোনো সাধারণ কলেজের তুলনায় অনেক উন্নত।
এই পোস্টে আমরা অন-ক্যাম্পাস ও অধিভুক্ত কলেজের পার্থক্য, কোর্স ও আসন বণ্টনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন-ক্যাম্পাস প্রোগ্রামে ভর্তি হতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন এবং নিয়মিত অফিসিয়াল তথ্য আপডেট অনুসরণ করুন।
🎯 ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ও আবেদন লিংক পেতে পিয়নমামা ডটকম সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।